
করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাব প্রস্তুতের কাজ শেষ করে পিসিআর মেশিনও বসানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক)। কলেজের পুরনো একাডেমিক ভবনের নিচতলায় তিনটি কক্ষ নিয়ে ল্যাবটি প্রস্তুতের কাজ শেষ করে গণপূর্ত বিভাগ। মেশিন বসানোর পর চলতি সপ্তাহেই এখানে নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে, এমন আশার কথা জানিয়েছিলেন কলেজ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা।
কিন্তু ঢাকা থেকে ক্যালিব্রেশন টিম আসলেন। তাঁরা খুঁটি-নাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মেশিনে কিছু ক্রটি খুঁজে পেয়েছেন। এ ধরনের ক্রটি নিয়ে মেশিন চালানো সম্ভব নয়। যার ফলে বসানো পিসিআর মেশিনটি রোববার (গতকাল) আবার ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন ওই মেশিনের ক্রটি সারানোর অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে চমেক প্রশাসনকে। অবশ্য, এই ত্রুটি আদৌ সারানো সম্ভব কি না, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন আরেকটি পিসিআর মেশিনই সরবরাহ দিতে হবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। তবে বেসরকারি যে প্রতিষ্ঠানটি মেশিন সরবরাহ দিয়েছে, তাদের কাছে আর নতুন মেশিন আছে কি না, তাও নিশ্চিত নয়। তাই এখন ঢাকার পানে পথ চেয়ে অপেক্ষায় বসে আছে চমেক প্রশাসন।
অবশ্য, কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা থেকে ইতিবাচক কোন খবর পেলেও ওই মেশিন ফের চট্টগ্রামে পৌঁছানো, স্থাপন ও চালুকরণে আরো বেশ কয়দিন সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. শামীম হাসান। অন্তত আরো দশদিন মতো লাগতে পারে বলে ধারণা অধ্যক্ষের। অর্থাৎ ঢাকার পানে চেয়ে থাকলে অন্তত দশ দিনের আগে চমেক ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চালুর তেমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু নিয়ে এক প্রকার অনিশ্চয়তাও বলা যায়। অথচ, হাজারেরও বেশি নমুনা জট লেগে আছে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে। শুধু সক্ষমতার অভাবে এসব নমুনা পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে, ৭/৮ দিনের আগে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টই মিলছে না। বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদও জানিয়েছেন- ৬/৭ দিন আগে সংগ্রহ করা নমুনাগুলোই এখন পরীক্ষা করা হচ্ছে। যার কারণে রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হচ্ছে। জনবলসহ নানাবিধ সংকটে তাঁরাও নিরুপায়। যদিও সকাল ৯টা থেকে রাত ১০/১১টা পর্যন্ত টানা কাজ করছেন তাঁরা। গুটিকয়েক মানুষ নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন ল্যাবে।
এদিকে, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড অ্যানিমেল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষার উপযোগী অন্তত ৫টি পিসিআর মেশিন রয়েছে। এ সংক্রান্ত খবর এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যদিও ২৫ এপ্রিল থেকে নিজেদের ল্যাবে একটি মেশিনে নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে পরীক্ষার উপযোগী আরো বেশ কয়টি মেশিন ল্যাবে রয়েছে। এর মধ্য থেকে একটি পিসিআর মেশিন ধার করে নিয়ে গেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব এই মেশিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চিঠি দেন। চিঠির প্রেক্ষিতে একটি পিসিআর মেশিন কয়েকদিন আগে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের মাধ্যমে হস্তান্তর করার কথা জানান ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর গৌতম বুদ্ধ দাশ। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মেশিনটি জামালপুরে দেয়া হয়েছে বলেও জানান উপাচার্য।
একটি মেশিনে পরীক্ষা কার্যক্রম চালু এবং অপর একটি মেশিন জামালপুরে ধার দিলেও নমুনা পরীক্ষার উপযোগী আরো তিনটি পিসিআর মেশিন রয়েছে ভেটেরিনারির ল্যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্যাথলজি এন্ড প্যারা সাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও ল্যাব ইনচার্জ ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এখন সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন-
ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিসিআর মেশিন ধারে জামালপুরে দেয়া সম্ভব হলে, চমেক ল্যাবে নেয়া যায় না কেন? চমেক প্রশাসন ও স্বাস্থ্য প্রশাসনসহ সশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করা হয় আজাদীর পক্ষ থেকে। যা বুঝা গেলো- তড়িৎ উদ্যোগ নিয়ে কোন সমস্যা সমাধানের তাড়না সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষের মাঝেই দৃশ্যমান নয়। বরঞ্চ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার অপেক্ষায় বসে থাকতে অভ্যস্ত তাঁরা।
ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব ইনচার্জ ড. জুনায়েদ সিদ্দিকীর মতে- ভিসি মহোদয়ের কাছে চাইলে চমেক কর্তৃপক্ষকে একটি মেশিন অবশ্যই দেয়া হতো। না দেয়ার তো কোন কারণ দেখি না। আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে মেশিন ইনস্টলও করে দিতে পারতো। কিন্তু তাঁরা তো চেয়েছে বলে শুনিনি। অথচ চাইলে তাঁরা অনেক আগেই আমাদের মেশিন নিয়ে কার্যক্রম চালু করতে পারতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর গৌতম বুদ্ধ দাশও বলছেন- তাঁরা তো আমাদের কাছে চাইতে পারতো। আগে চাইলে প্রয়োজনে আমরা জামালপুরেও মেশিন দিতাম না।
আর চমেক প্রশাসন বলছে- স্বাস্থ্য প্রশাসন উদ্যোগ নিলে বিষয়টি সহজ হয়। এতে ঢাকার দিকে আমাদের চেয়ে থাকতে হবে না। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে মেশিনটি বসানো এবং নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রমও চালু করা যাবে। জানতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
প্রসঙ্গত, ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডির ল্যাবে গত ২৫ মার্চ থেকে করেনার নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। প্রথম দিকে নমুনার সংখ্যা কম থাকলেও দিনে দিনে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাছাড়া চট্টগ্রামের বাইরে নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন জেলার নমুনাও পরীক্ষার জন্য বিআইটিআইডি ল্যাবে আসছে। যার কারণে নমুনা জট লেগে আছে বিআইটিআইডিতে। এর মাঝে ২৫ এপ্রিল থেকে ভেটেরিনারির ল্যাবে একটি মেশিনে নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। ভেটেরিনারির ল্যাবেও দৈনিক শ’খানেক নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। আর বিআইটিআডি ল্যাবে ১৮০ থেকে ১৯০টি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে দিনে। এরপরও হাজারেরও বেশি নমুনা জমে আছে বিআইটিআইডিতে। চমেকের ল্যাবটি চালু হলে এই জট কমবে বলে আশা করেছিলেন স্বাস্থ্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু মেশিন জটিলতায় এখন চমেকের ল্যাব চালু নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যদিও উদ্যোগ নিয়ে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মেশিন এনে ২/১ দিনের মধ্যেই এ কার্যক্রম চালু করা যায় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
পাঠকের মতামত